শব্দের মনস্তত্ত্বঃ রাজপুরুষ বনাম প্রজা-২

ডিসি মানে কি?

এবার দেখা যাক, আশেপাশের পরিবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এমন কিছু কি শিখছে, যা প্রকৃত অর্থে ভুল এবং বাকী জীবন সে এই ভুল অর্থ বা ধারনা নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে? ছোট্ট একটা উদাহরন দেয়া যাক। প্রতিটি জেলায় বর্তমানে মাশাল্লাহ একজন করে ডিসি আছেন। আমি আমার বন্ধুমহলে একবার একটা জরীপ করেছিলাম, ডিসি মানে কি? শুধুমাত্র যারা বিসিএস পাশ করে ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভূক্ত (৩০ জনের মধ্যে মাত্র ০২ জন = প্রায় ৭%), তারা বলেছে ডেপুটি কমিশনার আর বাকীরা বলেছে ডিষ্ট্রিক্ট কমিশনার। আমার বন্ধুমহল নিশ্চয় শিক্ষিত একটি শ্রেনী যারা দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন – তাদের জ্ঞানের বহর যদি এরকম হয় তাহলে চলবে?

আমার এক বন্ধু বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। একবার একদেশ থেকে অন্য দেশে ট্রান্সফার হবার পথে দেশে কিছুদিন ছিল। সেরকম সময় একদিন, তাকে আমি বললাম, দোস্ত ডিসি শব্দটার বাংলা মানে কি? সে বলল, ক্যান জানস না? না মানে, তার কাজ আর নামের কি সাযুজ্য আছে? বৃটিশ শাসনামলে এই নামটি ছিল, সি. ও. রেভিনিউ। অর্থাৎ এই ভদ্রলোকের দায়িত্ব হলো, সরকারের রাজস্ব আদায় করা। তো আমার বন্ধুটি বলল, তুই কি মনে করিস, ডিসি-র বাংলা মানে হওয়া উচিত, প্রধান রাজস্ব আদায়কারী? এই বলেই সে একটা অট্টহাসি উপহার দিল। বর্তমানে, জেলা শহরগুলোতে, বিশালাকার সাইনবোর্ডে লিখা থাকে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের বাসভবন ইত্যাদি। ডিসি শব্দটি ইংরেজিতে হলো ডেপুটি কমিশনার। ঠিক কিসের মাপকাঠিতে ডিসি অর্থ জেলা প্রশাসক হয় – এটা আমি কখনোই বুঝতে পারি না। প্রশাসক মানে যিনি প্রসাশন পরিচালনা করেন। আর প্রশাসন মানে হলো, প্রকৃষ্ট রুপে যে শাসন। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায়, সরকারের নির্বাহী বিভাগকে প্রশাসন নামে অবহিত করে আমরা কি শিক্ষার্থী এবং আপামর জনসাধারনকে ভুল একটি শব্দ শেখাচ্ছি না?

Read more: শব্দের মনস্তত্ত্বঃ রাজপুরুষ বনাম প্রজা-২

উপজেলা পর্যায়ে, এই কর্মকর্তার নামই আবার, উপজেলা প্রশাসক নয় – এটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কি বৈমাত্রেয় ব্যবহার? তার নাম উপজেলা প্রশাসক হলে অন্তত সাদৃশ্যটা সাধারণ মানুষ ধরতে পারত। আচ্ছা, উপজেলার ক্ষেত্রে যদি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চলতে পারে, তাহলে, ডিসিদের ক্ষেত্রে জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হলে ক্ষতি কোথায়? আর তাছাড়া বিচার বিভাগ পৃথকীকরনের পর, তাদের তো কোন বিচারিক ক্ষমতা নেই, ভ্রাম্যমান আদালত ছাড়া, সেক্ষেত্রে আমরা বছরের পর বছর ধরে, এমন সব মানুষকে প্রশাসক হিসেবে নামকরণ করে আসছি যে, তা সকলের কাছে ভুল সিগন্যাল দিচ্ছে।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনে যারা চাকরী পাবেন এবং নির্বাচনে যারা জয়ী হয়ে যারা বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধি হিসাবে অধিষ্ঠ হচ্ছেন, তারা সংবিধান অনুযায়ী, সকলেই জনগনের সেবক। আর তাদেরই একাংশকে আমরা নাম দিয়েছি, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় প্রশাসক ইত্যাদি। এই প্রশাসক শব্দটি গণমানুষকে ভীত করে, দূরে ঠেলে দেয়। অশিক্ষিত, দরিদ্র মানুষ এদের কাছে যেতে ভয় পায়, আর সেখানেই, গড়ে উঠে দালালী ব্যবসা, ঘুষ আদায়কারী চক্র। সামান্য একটি ইংরেজি শব্দের অনুপযুক্ত বাংলা ব্যবহার, কিভাবে মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে, ভেবে দেখুন। এটা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।

প্রশাসক শব্দটি থেকে উৎসারিত যে ভীতি জনমনে কাজ করে, তা ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষকে সরকার যন্ত্র থেকে ঠেলতে ঠেলতে অনেক দূরে নিয়ে চলে গেছে। ইতিমধ্যে যে মানসিক ভীতি কোটি কোটি সাধারন মানুষ মনের ভেতরে পোষন করে, তাতে করে, সরকারের নির্বাহী বিভাগের অবস্থান যদি হয় তেঁতুলিয়া তো সাধারন মানুষ থাকে টেকনাফে। এই দূরত্ব মানুষের পাওয়া এবং প্রাপ্য সরকারী সেবার মধ্যে একটি অক্ষয় দেয়াল তৈরী করে বসে আছে। রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার পালা বদল হলেও জেলা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কিন্তু পালাবদল নেই। বদলি আছে, তবে সমস্যাটা যেহেতু জনগণের মনের মধ্যে, ভীতিকর একটি নামের আড়ালে, একজন জন-বান্ধব ডিসি যদিও বা কোথাও থাকেন, তিনি চাইলেও জনগণ তার কাছে যাবে না।

ভুল নামকরনের এই দায় কার এবং এর ফলে জনগনের সাথে সরকারের নির্বাহী যন্ত্রের মধ্যে দীর্ঘায়মান দূরত্ব, কমবে কিভাবে?

প্রথমে ফেসবুক নোটস আকারে লিখা হয়, ২০১৪ সালে। এখানেঃ https://www.facebook.com/notes/10159426968023538/

শব্দের মনস্তত্ত্বঃ রাজপুরুষ বনাম প্রজা -১

শৈশবের বাংলা বিষয়গুলোতে বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে শব্দ গঠন ও নতুন শব্দ জানার স্তরে একটি জিনিষ অবশ্য পাঠ্য ছিল। তা হলো বিপরিত শব্দ। প্রিয় পাঠক, আসুন শৈশবের সেই বিপরীত শব্দগুলো, আরেকটু ঝালিয়ে নিই। বলুন দেখি, চোরের বিপরীত শব্দ কি? পুলিশ, ঠিক ধরেছেন। এবার বলুন দেখি, সৎ এর বিপরীত শব্দ কি? ঠিক বলেছেন অসৎ। আচ্ছা এবার বলুন, রাজা শব্দটির বিপরীত শব্দ কি হবে? যারা ভাবছেন রাণী, তাদের বলি, এটা লিঙ্গান্তর নয় কিন্তু! আর যারা ভাবছেন, প্রজা – তারা ঠিকই বলেছেন, তারা ১০০ তে ১০০।

শব্দ নিয়ে খেলার এবারের শব্দ হলো, পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। এর অর্থ কি? গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, কোন ***** এই শব্দার্থ বানিয়েছে? এখানে রাজা কে?

Read more: শব্দের মনস্তত্ত্বঃ রাজপুরুষ বনাম প্রজা -১

এখানে লক্ষনীয় শব্দটা হচ্ছে প্রজা। তো দেশে যদি প্রজা থাকে, তাহলে রাজা-ও থাকতে হবে। নাহলে প্রজা শব্দটি শুধু বৃটেনের মতো দেশে থাকতে পারে যেসব দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজবংশ লালন পালন করা হয়, কিন্তু নির্বাহী ক্ষমতা থাকে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে। আমাদের দেশে তো রাজ বংশ নেই। তাহলে রাজাও নেই, প্রজারও থাকার কথা নয়। সকল ভূমির মালিক হবে রাষ্ট্র এবং জনগণ একটি নির্দিষ্ট হারে ভূমিকর (খাজনা নামে পরিচিত) দিয়ে সেই ভূমি ভোগ-দখল এবং বিক্রি করতে পারবে – এরকম একটি আইন জারি করা হয় পাকিস্থান শাসনামলে, ১৯৫০ সালে, যার বাঙলা নাম, প্রজাস্বত্ত আইন (সংক্ষেপে) আর ইংরেজিতে হলো THE STATE ACQUISITION AND TENANCY ACT, 1950। দেখুন দেখি, টিনেন্ট শব্দটির মানে কেন প্রজা করা হলো? এখানে প্রজা কে? কেন, আপনি, আমি সাধারণ মানুষ, দরিদ্র মানুষ। মূল প্রশ্নটি হলো প্রজা কেন ব্যবহার করা হলো? এর দুটো সম্ভাব্য উত্তর আমি খুঁজে পেয়েছি। একটি হলো, দীর্ঘ ২০০ বছরের শাসনামলে বৃটিশ শাসকগোষ্ঠি সাফল্যের সাথে আমাদের মস্স্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছে, তারা শাসক আর আমরা নেটিভ, যেটা আসলে প্রজা অর্থে তারা ব্যবহার করত। পাকিস্থান স্বাধীন হবার পর এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন কবার পরও, যারা আইন প্রনয়ন করেন, তারা নিজেদের অজান্তেই বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির স্তরে নিজেদের রেখে আর সকলকে নেটিভ বা শব্দভেদে প্রজা স্তরে নামিয়ে দিয়েছেন। আরেকটি কারণ হতে পারে, তারা কাজটি অজান্তে করেননি, করেছেন জেনেশুনেই, যেন কাগজে কলমেই জনগণ প্রজা হিসেবে থাকে।

সুতরাং পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ – এর অর্থ যদি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, এটা মেনে নেই, সাথে সাথে এটাও আমাকে মেনে নিতে হয়, প্রজা হবার গ্লানি।

ব্যকরণে বাক্যের ভুল আলোচনায় একপ্রকার ভুল বাক্য পাওয়া যায়, সেটাকে বলে, গুরুচন্ডালী দোষে দুষ্ট বাক্য। উদাহরণে বলা ছিল, গরুটি আকাশে উড়িতেছে। এখানে কর্তা, ক্রিয়া পদ, কাল সবই ঠিক আছে কিন্তু বাক্যটি একটি অসম্ভব অর্থ প্রকাশ করছে।

আমাদের মহান সংবিধানে একটি বাক্য আমার নজরে এসেছে, যেটি গুরুচন্ডালী দোষে দুষ্ট। বাক্যটি হলো, জনগণ-ই এই প্রজাতন্ত্রের মালিক। আমরা তো প্রজা। আমাদের ভূমির মালিক রাষ্ট্র। এখানে হু ই জনগন? বাক্যটি অন্য যেকোন বাক্য হতে পারত যেমন: জনগণ-ই এই ভূখন্ডের মালিক – বা সেই জাতীয় কিছু।

প্রজা কিভাবে মালিক হয়?

আরেকটি তথ্য আপনাদের জন্য তুলে ধরি। কেমন লাগে, ধাক্কা খান কিনা, জানালে খুশী হবো। তথ্যটি হলো: জানুয়ারী, ২০১১ সালে, বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের ১৩তম সংস্করণে অন্য একটা শব্দ খুঁজতে গিয়ে, হঠাৎ দেখলাম, রাজপুরুষ শব্দের মানে কি। আপনি বলুন তো রাজপুরুষ শব্দটির মানে কি? হয়ত ভাবছেন, রাজার উত্তরাধিকারী বা সেই ধরনের কিছু। উক্ত অভিধানের ১০২৭ পৃষ্ঠায়, রাজপুরুষ শব্দের অর্থ যেভাবে দেয়া আছে হুবহু ছবিটাই তুলে দিলাম। দেখুন, ধাক্কা খান এবং ধাক্কা খান কিনা, জানান।

কেউ বলতে পারেন – কবে দূর হবে এই রাজা-প্রজা সম্পর্ক?

কবে দূর হবে এই মানসিকতা?

প্রথমে ফেসবুক নোটস আকারে লিখা হয়, ২০১৪ সালে। এখানেঃ https://www.facebook.com/notes/10159426968008538/

আমার বড় ভয় করছে গো !

আমার স্ত্রী বলেন আমি নাকি জানোয়ার গোত্রীয়। যেমন জানোয়ারেরা মাটির দিকে বুক দিয়ে ঘুমায়, তেমনি আমিও মাটির দিকে বুক দিয়ে (মানে উপুড় হরে) ঘুমাই। আর তাই তিনি মনে করেন, তাঁর দাম্পত্য জীবন আমি বিষিয়ে তুলছি, একজন জানোয়ার হবার সুবাদে। অথচ, আমাদের প্রেমের বিয়ে। আর আমি কিনা ওকে এত ভালবাসি।

একরাতে ঘুমাতে গিয়ে, তুচ্ছ একটা কারনে ও যখন প্রচন্ড রেগেমেগে আমাকে বিছানা থেকে নামিয়ে দিল – তখন মশারীর বাইরে সুযোগ মত মশারা আমাকে পেয়ে দেখিয়ে দিল এক চোট আর ওদিকে মাথার নীচে শক্ত বাস্তবতা – ডিকশনারী। সুতরাং কাল বিলম্ব না করে মাথা খাটানো শুরু করলাম – এই মুহুর্তে একটা প্রেমের কথা বলে মান ভাঙ্গানো দরকার। কি বলব কি বলব – করে শেষ পর্যন্ত বল্লাম, আমি মরে গেলে আমাকে পানিতে ভাসিয়ে দিয়ো, ক্যামন? ভেবেছিলাম সে বলবে, ক্যানো? তখন আমি বলব, প্রেমের মরা তো জলে ডোবে না, দেখে নিও আমি ডুবব না। অথচ, তিনি কিছুই বললেন না। যেন শুনতেই পাননি। কি আর করা – আবার বললাম, তবে দ্বিতীয়বার অত জোর পেলাম না গলায়। এবার তিনি দেয়ালের দিক থেকে পাশ ফিরে বললেন, বিড়বিড় করছো ক্যানো? কী? কি বলতে চাও তুমি? লাইফটা তো তুমি আমার আখের ছোবড়া বানিয়ে দিলে।

Read more: আমার বড় ভয় করছে গো !

শুনেছেন কথা? হোয়াই আখের ছোবড়া? আমি কি সুগার মিল নাকি? আপসেট হয়ে গেলাম। তাছাড়া, আমি যা বলেছি কিংবা বলতে চাচ্ছি তা সম্ভবত তিনি শুনতেই পাননি, শুধু বিড়বিড় শুনেছেন। (অবশ্য অভিজ্ঞ স্বামী স্ত্রীরা জেনে থাকবেন যে, সাধারনত স্বামী-স্ত্রীদের, দাম্পত্য কলহের মধ্যে, শ্রবন শক্তি বৃদ্ধি কিংবা হাস – দুটোই অতি মাত্রায় ঘটতে পারে)। যাহোক, আমারতো মশার কামড় আর মাথার নীচের ডিকশনারী থেকে মুক্তি দরকার। সুতরাং ফাইনাল একটা প্রচেষ্টা চালালাম, না মানে বলছিলাম কি – আমি মরে গেলে পানিতে ভাসিয়ে দিলে দেখবে … সম্ভবত মাগুরছড়ার আগুনটা এই ভঙ্গিতেই লেগেছিল – যে ভঙ্গিতে তিনি মুহুর্তেই রণাঙ্গিণী। কি? কি বললে? পানিতে ভাসাব? ক্যানো সাপের কামড় কামনা করছ নাকি মনে মনে? মরতে তো চাইবেই, আমিই তো তোমার জীবন হেল করে দিলাম | এখন তো ও মুখ দিয়ে এরকম কথাই বের হবে। ভেবেছ এত সহজে ছেড়ে দেব…..?

ব্যস কোথায় গেল আমার প্রেমলাপে মান ভাঙ্গানোর প্ল্যান আর কোথায় কি। শেষ পর্যন্ত যখন উনার বাক্যাবলীর [বাক্যবাণ কদাচ নয়। কারন এই লেখা তিনিও পড়বেন।] বেগ তুখোড় হয়ে উঠল – বুঝলাম থামানোর চেষ্টা করা উচিত। বললাম, দ্যাখো, আমি সেটা মিন করে বলিনি। আমি চেয়েছি তুমি যখন প্রশ্ন করবে, কেন পানিতে ভাসাতে হবে, তখন আমি বলব, … … । আর যায় কোথায়। শেষ হলো না, তার আগেই হিরোশিমার বজ্রপাত। কি? তুমি চাইলেই আমি প্রশ্ন করব? তুমি ভেবেছটা কি? যা চাইবে তাই হবে? এতদিন বহুত করেছি। যা চেয়েছ করেছি। আর না, এবার নিজ নিজ রাস্তা দেখ।

নাহ। আর চুপ থাকা যায় না। মশার কামড় খেয়ে এসব যাত্রা পালা করার থেকে এবার সত্যি সত্যি রাস্তা মাপা উচিত। এত অপমান আর সহ্য হয় না। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। দরজার সিটকিনিটা খুললাম, শব্দ করেই, শেষ মূহুর্তের আশা, যদি বাধা দেয় (আহা!)। কিন্তু না, ওপাশ নিস্তব্ধ। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ালাম, তারপর হ্যাঁচকা টানে দরজাটা খুল্লাম। এবারো
কোন সাড়া মেই। যাহ্‌ শালা যা থাকে কপালে, বের হলাম বারান্দায়। ধীরে ধীরে মুভ করছি। মনে ক্ষীন আশা, যে কোন সময়, ব্যাক করার আহ্বান আসবে। বারান্দায় বেরিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম পর্যন্ত। শূণ্য। আর সময় দেয়া যায় না, ভেবে চটজলদি মেইনগেটে। মেইন গেটে এসেই হুঁশ হলো – শালার চাবি তো আনিনি। ভাবলাম, ফিরবো? নাহ্‌ থাক। কিন্তু শালার এখানে তো সব ড্রেনের মশা। সুতরাং গট ব্যাক।

রুমে ঢুকতেই উনার স্বগতোক্তি শুনলাম – যাবে আর কোথায়, জানি তো ফিরতে তোমাকে হবেই। মোল্লার দৌড় আমার জানা আছে। বল্লাম, জ্বি না, ফিরে আসিনি, চাবি নিতে এসেছি। এরপর ওপাশ কেন জানি চুপ মেরে গেল। হঠাৎ ওপাশ এত ভদ্র হলো কেন, বুঝলাম না। চাবিটা হাতে নিয়ে আমিও তাই একটু ভদ্রতা করলাম। বল্লাম, যাই। এবারও চুপ। কি আর করা। দরজা পার হলাম। অবশ্যই ধীর পদক্ষেপে। কিন্তু কিছুই ঘটল না। এবার বারান্দার সিঁড়িতে পা রাখব, এমন সময়, আচমকা পেছন থেকে তিনি জড়িয়ে ধরলেন। সুতরাং মেঝের পাট চুকিয়ে আবারো বিছানাস্থ। কারো মুখে কোন কথা নেই। সব হিন্দী সিনেমা স্টাইলে।

তারপর বিছানায় শুয়ে ভাবলাম, যাক মান ভেঙ্গেছে, এবার বলা যাক দু-একটা প্রেমালাপ। খুব ইনিয়ে বিনিয়ে শুরু করলাম। ইয়ে, মানে আমি তো চলেই যাচ্ছিলাম, ফেরালে ক্যানো? অমনি চটপট উত্তর এলো, তুমি জানো না? এই রুমেই তো বাড়ীওয়ালার মেয়েটা সুইসাইড করেছিল? তুমি কোন‌ আক্কেলে আমাকে একা এই ঘরে ফেলে যাচ্ছিলে? আমার ভয় করবে না?

এই কথা শুনে তো আমারি ভয় শুরু হয়ে গেল। না, না, সুইসাইডের জন্যে নয়। এই ঘরে আরো মিনিমাম পঁচিশ-তিরিশ বছর ৷ তাই বল্লাম, আমারো বড় ভয় করছে গো। এতক্ষনে কাজ হলো। তিনি ঘন হয়ে এলেন।

মালিবাগ
২০/০৭/৯৭
[ব্যক্তিগত নোটঃ সে রাতে আসিফ ভাই এবং জয়া আমার মালিবাগের বাসার ছিলেন।]

 

“জেনে রাখা ভালো” একটি বইয়ের কথা

lightএকসময় আমি স্নাতক শ্রেনীতে পড়াতাম। অন্যান্য কোর্সের সাথে, প্রায়ই দেখা যেত আমাকে “ব্যবসায় গণিত” “বিজনেস ম্যাথ” পড়াতে হতো। বিজনেস ম্যাথ কোর্সের প্রথম ক্লাশে রাশভারী ভঙ্গিতে ঘোষনা করতাম, আমি একটি প্রশ্ন করব, যে এটির সঠিক উত্তর দিতে পারবে, তাদের প্রথম দশজন ফাইনাল গ্রেড এ পাঁচ মার্ক গ্রেস পাবে, যদি এ প্লাস পাবার জন্য সেটি তাদের দরকার হয়। সবাই খাতা পেন্সিল নিয়ে তৈরী হয়ে নাও। যে আগে উত্তর লিখবে, সে হাত তুলবে। আমি প্রথম বিশজনের উত্তর খতিয়ে দেখব।

Continue reading ““জেনে রাখা ভালো” একটি বইয়ের কথা”

আমাদের আঙিনার ঘ্রাণ

আঙিনার পূর্ব পার্শ্বে ছিল একটা গন্ধরাজ ফুলের গাছ। ভোরবেলাটা ছিল গন্ধরাজের সুবাস ছড়ানো। খুব সকালে গোয়াল ঘর থেকে গরু মহিষ বের করে বাইরে খুলিতে নেওয়ার সময় আঙিনায় গোবর পড়ত। এরপর পরই আঙিনা ঝাড়ু দেওয়া শুরু হতো। এক দেড় হাজার স্কয়ার ফিটের আঙিনা। ঝাড়ু দেওয়ার আগে ধূলা যেন মরে এই উদ্দেশ্যে পানি ছিটানো হতো। Continue reading “আমাদের আঙিনার ঘ্রাণ”