নিষিদ্ধ গতানুগতিকতা

পাঞ্জাবীটা গায়ে চড়িয়ে মামুন খুব উচু গলায় ডাকল, “চয়ন, চয়ন এই চয়ন…” হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে এল চয়ন।
: কি মামা ডাকছ কেন?
: আমার আলনার় হাত দিয়েছিস?
: না তো মামা।
: ফের মিথ্যা কথা? শয়তান এরই মধ্যে চুরি করেছিস?
স্তম্ভিত চয়ন চুপ করে থাকে। জানে কথা বললে চড় টড় খেতে হতে পারে৷
: কাল সন্ধ্যাতেই রাখলাম পঁয়ত্রিশ টাকা আর এখন আছে দশ টাকা। কোথায় রেখেছিস হারামজাদা বের কর পঁচিশ টাকা। Continue reading “নিষিদ্ধ গতানুগতিকতা”

নানী বাড়ি ইয়েস, নানাবাড়ি নো

শৈশবের সুজালপুর, অম্লান স্মৃতি। সবচেয়ে অবাক বিষয় আমার এখনো লাগে, এই পরিবারে নানাবাড়ি শব্দটা নাই। সকলেই নানী বাড়ী যায়।
।।
পারিবারিক সম্পর্কগুলিকেও বিশেষ ভাবে সম্বোধন করা হয়। স্কুল শুরু করার পর থেকে জানা শুরু করলাম, মানুষে বড় চাচা বলে, কেউ কেউ বলে কাকা, আমরা বলি ‘বড় আব্বা’। আমরা, বিশেষ করে আমরা চার ভাই বোন ছিলাম সবচেয়ে পৃথক সম্বোধন নিয়ে, মানে সেভাবে শেখানো হয়েছিল আর কি। Continue reading “নানী বাড়ি ইয়েস, নানাবাড়ি নো”

লাল আটার রুটি টু কনজিউমার ব্র্যান্ডস

ধান ভাঙা কল ছিল আমার দেখা কৃষি সমাজের প্রথম শিল্পায়ন আর দ্বিতীয়টা ছিল, সেচের জন্য শ্যালো।গুঁড়ো দুধ এসে এক দশকের মধ্যেই ঘি, মাখন, ছানা এবং গরুর মাংস – এসবের মূল্য বৃদ্ধিতে শক্ত ভূমিকা রাখল আর গরু ও দুগ্বজাত পণ্য বাজারে শেষ পেরেক মেরে দিল পাওয়ার টিলার। সরিষার তেলের ঘানিগুলো বন্ধ হতে থাকলো পামঅয়েল আর সয়াবিনের চাপে।

তখন সকালের নাস্তা ছিল ঢেঁকি ছাটা গমের লাল আটার রুটি আর আখের গুড়। জামাই গোত্রীয় কেউ বেড়াতে আসলে রুটি ঘিয়ে কিংবা ডালডা দিয়ে ভেজে দেওয়া হতো। সাথে গোটা কুসুম সহ ডিমের অমলেট। ধান ভাঙা কল ছিল আমার দেখা কৃষি সমাজের প্রথম শিল্পায়ন আর দ্বিতীয়টা ছিল, কৃষি জমিতে সেচের জন্য ধনীদের ঘরে ব্যবহৃত শ্যালো পাম্প, সংক্ষেপে শ্যালো।  ধীরে ধীরে মধ্যবিত্তের ঘরে বিদ্যুত বাতি এলো। ফিলিপস। আর বিদ্যুতের সাথে আসলো লাইট আর ফ্যান। “বায়োজিদ” হারিকেনের যুগেই রেডিও ছিল, হক ব্যাটারি দিয়ে চলত, ফ্যান এর পর আসলো টেলিভিশন বা টিভি, প্রথমে সাদাকালো তারপর এক দশক পর রঙিন টিভি। থানা পর্যায়ে সাদাকালো টিভি আসার সাথে সাথে যে ব্রান্ড গুলো ধীরে ধীরে মফস্বল ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল Continue reading “লাল আটার রুটি টু কনজিউমার ব্র্যান্ডস”

রাবেয়া খালা – প্রথম মৃত্যুর ঘ্রাণ

বড়মার নাম ছিল সাইদা বেগম। তাঁর বোন ছিলেন রাবেয়া খালা। তখন 1978 বা 1979 সাল হবে। আমার মা’র সাথে নিউটাউন আর ঈদগাহবস্তির মাঝামাঝি একটা ক্লিনিকে অনেকবার গিয়েছি, এমনটা মনে পড়ে। ঐখানে তখন দেলোয়ার ডাক্তার (ডক্টর দেলোয়ার হোসেন, জেনারেল সার্জারি) ক্লিনিক খুলেছিলেন। ঐ ক্লিনিকে রাবেয়া খালা ভর্ত্তি ছিলেন। আম্মা প্রায় প্রতিবারই আমাকে নিয়ে যেতেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা রাবেয়া খালা আমাদেরকে দেখলে খুব খুশী হতেন। Continue reading “রাবেয়া খালা – প্রথম মৃত্যুর ঘ্রাণ”

খেলনার নাম পাওয়ার হাউজ

যেখানেই যাও মাগরিবের আযানের আগে বাড়ীতে ফিরতে হবে। এটা ছিল শিশুদের জন্য সান্ধ্য আইন। খেলার মাঠ থেকে ঘরে ফিরে প্রথম কাজ ছিল হাত মুখ ধোয়া। আর যারা একটু বড় তারা বায়োজিদ হারিকেন মুছতে বসতে হতো, কাজের লোক না থাকলে। হারিকেন মুছে তাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালাতে বাড়ীতে সন্ধ্যা নামতো। মাটিতে পাটি (আমরা বলতাম শপ) বিছিয়ে পড়তে বসে মশা, আলোর পোকা, সবুজ ঘাস ফড়িং আর একটু দূরের জোনাকি পোকারা সাক্ষী আমি চিৎকার করে পড়তাম ঠিকই তবে নজর থাকত ঐ পোকা মাকড়ের দিকেই বেশী। Continue reading “খেলনার নাম পাওয়ার হাউজ”