একসময় আমি স্নাতক শ্রেনীতে পড়াতাম। অন্যান্য কোর্সের সাথে, প্রায়ই দেখা যেত আমাকে “ব্যবসায় গণিত” “বিজনেস ম্যাথ” পড়াতে হতো। বিজনেস ম্যাথ কোর্সের প্রথম ক্লাশে রাশভারী ভঙ্গিতে ঘোষনা করতাম, আমি একটি প্রশ্ন করব, যে এটির সঠিক উত্তর দিতে পারবে, তাদের প্রথম দশজন ফাইনাল গ্রেড এ পাঁচ মার্ক গ্রেস পাবে, যদি এ প্লাস পাবার জন্য সেটি তাদের দরকার হয়। সবাই খাতা পেন্সিল নিয়ে তৈরী হয়ে নাও। যে আগে উত্তর লিখবে, সে হাত তুলবে। আমি প্রথম বিশজনের উত্তর খতিয়ে দেখব।
প্রশ্নটি লিখার পর, প্রথম কয়েক সেকেন্ডে আমি দেখি, ছাত্র-ছাত্রীরা হতভম্ব। তারা বোঝার চেষ্টা করে, স্যার কি রসিকতা করছেন? যেখানে ফাইনাল পরীক্ষায় প্রয়োজন হলে পাঁচ মার্ক গ্রেস পাওয়া যাবে, সেখানে এটা কেমন প্রশ্ন? এটা কোন প্রশ্ন হলো? একটা ক্লাশ ফাইভের শিশুও তো এটার উত্তর জানে। হতভম্ব ভাব
কেটে যাবার পর, ধীরে ধীরে তাদের চেহারাগুলি উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে শুরু করে। চাপা হাসির আভাষ পাওয়া যায়। দুয়েকজন যারা শেষের দিকের একটি বা দুটি ডিজিট নিয়ে
অনিশ্চিত, তারা ফিসফিস করে পাশের জনের কাছে নিশ্চিত হতে চায়। তাদের দ্বিধা দ্বন্দ ঘুচিয়ে আমি তাড়া দিয়ে উঠি, কুইক। কোন কথা না। প্রথম বিশ জনের কাছে গিয়ে খাতা দেখার পর, দেখি সবারই উত্তর ভুল। যখন আমি বলি, তোমাদের সকলের উত্তর ভুল। সবাই প্রথমে শক্ড হয়, এরপর গুঞ্জন শুরু হয়,
অবশেষে, সাহসী দুয়েক জন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, স্যার আমরা যে কিলোমিটারে জবাব দিয়েছি সেজন্যে আমরা কি ভুল? আমি তখন তাদের বলি, দেখো আমার প্রশ্নের উত্তর হলো, বাংলাদেশের আয়তন অপরিমেয়। আর তোমরা যেটা লিখেছ, সেটা লিখেছ, ক্ষেত্রফল, বাংলাদেশের ক্ষেত্রফল, আয়তন নয়। ছাত্র-ছাত্রীরা ভীষন হতাশ হয়।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়, আমার জানামতে, প্রাথমিক এবং নিম্ন মাধ্যমিক স্তরেই বাংলাদেশের আয়তন কতো – এই প্রশ্নটির উত্তর সকলের শিখে ফেলবার কথা। কিন্তু বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীই শেখে, ভুল। তারা ক্ষেত্রফল আর আয়তনের মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা গুলিয়ে ফেলে। ক্ষেত্রফলের একক বর্গ আর
আয়তনের একক ঘন, ইংরেজিতে স্কয়ার এবং কিউবিক। ক্ষেত্রফল থেকে আয়তন বের করতে হলে, ক্ষেত্রফলকে ক্ষেত্রের উচ্চতা দিয়ে গুণন করতে হবে। বাংলাদেশের উচ্চতা কতো হবে?
আমার যতদূর মনে পড়ে, “জেনে রাখা ভালো” নামে একটি বই থেকে প্রথম এই ভুলটি আমি শিখি। এরপর প্রচুর কিংবা বলা চলে প্রায় সকল সাধারন জ্ঞানের বইতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রফলকে আয়তন বলা হয়েছে। এইসব বইতে আরো যে কত উল্টা পাল্টা জিনিষ থাকে।
আমার সামান্য শিক্ষকতা জীবনে আমি দেখেছি, শৈশবে বাংলাদেশের বাংলাদেশের ক্ষেত্রফল ভুল শেখানোর ফলে, শিক্ষার্থীদের মনোজগতে দৈর্ঘ, প্রস্থ, ক্ষেত্রফল এবং আয়তন এই বিষয়গুলি খুব জটিলভাবে প্যাঁচ লেগে যায়। যা তারা আর ছাড়াতে পারে না। বাকী জীবনে অনেকেই গণিত বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে চলার ফিকির করে।
You must be logged in to post a comment.