আমার বড় ভয় করছে গো !

আমার স্ত্রী বলেন আমি নাকি জানোয়ার গোত্রীয়। যেমন জানোয়ারেরা মাটির দিকে বুক দিয়ে ঘুমায়, তেমনি আমিও মাটির দিকে বুক দিয়ে (মানে উপুড় হরে) ঘুমাই। আর তাই তিনি মনে করেন, তাঁর দাম্পত্য জীবন আমি বিষিয়ে তুলছি, একজন জানোয়ার হবার সুবাদে। অথচ, আমাদের প্রেমের বিয়ে। আর আমি কিনা ওকে এত ভালবাসি।

একরাতে ঘুমাতে গিয়ে, তুচ্ছ একটা কারনে ও যখন প্রচন্ড রেগেমেগে আমাকে বিছানা থেকে নামিয়ে দিল – তখন মশারীর বাইরে সুযোগ মত মশারা আমাকে পেয়ে দেখিয়ে দিল এক চোট আর ওদিকে মাথার নীচে শক্ত বাস্তবতা – ডিকশনারী। সুতরাং কাল বিলম্ব না করে মাথা খাটানো শুরু করলাম – এই মুহুর্তে একটা প্রেমের কথা বলে মান ভাঙ্গানো দরকার। কি বলব কি বলব – করে শেষ পর্যন্ত বল্লাম, আমি মরে গেলে আমাকে পানিতে ভাসিয়ে দিয়ো, ক্যামন? ভেবেছিলাম সে বলবে, ক্যানো? তখন আমি বলব, প্রেমের মরা তো জলে ডোবে না, দেখে নিও আমি ডুবব না। অথচ, তিনি কিছুই বললেন না। যেন শুনতেই পাননি। কি আর করা – আবার বললাম, তবে দ্বিতীয়বার অত জোর পেলাম না গলায়। এবার তিনি দেয়ালের দিক থেকে পাশ ফিরে বললেন, বিড়বিড় করছো ক্যানো? কী? কি বলতে চাও তুমি? লাইফটা তো তুমি আমার আখের ছোবড়া বানিয়ে দিলে।

Read more: আমার বড় ভয় করছে গো !

শুনেছেন কথা? হোয়াই আখের ছোবড়া? আমি কি সুগার মিল নাকি? আপসেট হয়ে গেলাম। তাছাড়া, আমি যা বলেছি কিংবা বলতে চাচ্ছি তা সম্ভবত তিনি শুনতেই পাননি, শুধু বিড়বিড় শুনেছেন। (অবশ্য অভিজ্ঞ স্বামী স্ত্রীরা জেনে থাকবেন যে, সাধারনত স্বামী-স্ত্রীদের, দাম্পত্য কলহের মধ্যে, শ্রবন শক্তি বৃদ্ধি কিংবা হাস – দুটোই অতি মাত্রায় ঘটতে পারে)। যাহোক, আমারতো মশার কামড় আর মাথার নীচের ডিকশনারী থেকে মুক্তি দরকার। সুতরাং ফাইনাল একটা প্রচেষ্টা চালালাম, না মানে বলছিলাম কি – আমি মরে গেলে পানিতে ভাসিয়ে দিলে দেখবে … সম্ভবত মাগুরছড়ার আগুনটা এই ভঙ্গিতেই লেগেছিল – যে ভঙ্গিতে তিনি মুহুর্তেই রণাঙ্গিণী। কি? কি বললে? পানিতে ভাসাব? ক্যানো সাপের কামড় কামনা করছ নাকি মনে মনে? মরতে তো চাইবেই, আমিই তো তোমার জীবন হেল করে দিলাম | এখন তো ও মুখ দিয়ে এরকম কথাই বের হবে। ভেবেছ এত সহজে ছেড়ে দেব…..?

ব্যস কোথায় গেল আমার প্রেমলাপে মান ভাঙ্গানোর প্ল্যান আর কোথায় কি। শেষ পর্যন্ত যখন উনার বাক্যাবলীর [বাক্যবাণ কদাচ নয়। কারন এই লেখা তিনিও পড়বেন।] বেগ তুখোড় হয়ে উঠল – বুঝলাম থামানোর চেষ্টা করা উচিত। বললাম, দ্যাখো, আমি সেটা মিন করে বলিনি। আমি চেয়েছি তুমি যখন প্রশ্ন করবে, কেন পানিতে ভাসাতে হবে, তখন আমি বলব, … … । আর যায় কোথায়। শেষ হলো না, তার আগেই হিরোশিমার বজ্রপাত। কি? তুমি চাইলেই আমি প্রশ্ন করব? তুমি ভেবেছটা কি? যা চাইবে তাই হবে? এতদিন বহুত করেছি। যা চেয়েছ করেছি। আর না, এবার নিজ নিজ রাস্তা দেখ।

নাহ। আর চুপ থাকা যায় না। মশার কামড় খেয়ে এসব যাত্রা পালা করার থেকে এবার সত্যি সত্যি রাস্তা মাপা উচিত। এত অপমান আর সহ্য হয় না। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। দরজার সিটকিনিটা খুললাম, শব্দ করেই, শেষ মূহুর্তের আশা, যদি বাধা দেয় (আহা!)। কিন্তু না, ওপাশ নিস্তব্ধ। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ালাম, তারপর হ্যাঁচকা টানে দরজাটা খুল্লাম। এবারো
কোন সাড়া মেই। যাহ্‌ শালা যা থাকে কপালে, বের হলাম বারান্দায়। ধীরে ধীরে মুভ করছি। মনে ক্ষীন আশা, যে কোন সময়, ব্যাক করার আহ্বান আসবে। বারান্দায় বেরিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম পর্যন্ত। শূণ্য। আর সময় দেয়া যায় না, ভেবে চটজলদি মেইনগেটে। মেইন গেটে এসেই হুঁশ হলো – শালার চাবি তো আনিনি। ভাবলাম, ফিরবো? নাহ্‌ থাক। কিন্তু শালার এখানে তো সব ড্রেনের মশা। সুতরাং গট ব্যাক।

রুমে ঢুকতেই উনার স্বগতোক্তি শুনলাম – যাবে আর কোথায়, জানি তো ফিরতে তোমাকে হবেই। মোল্লার দৌড় আমার জানা আছে। বল্লাম, জ্বি না, ফিরে আসিনি, চাবি নিতে এসেছি। এরপর ওপাশ কেন জানি চুপ মেরে গেল। হঠাৎ ওপাশ এত ভদ্র হলো কেন, বুঝলাম না। চাবিটা হাতে নিয়ে আমিও তাই একটু ভদ্রতা করলাম। বল্লাম, যাই। এবারও চুপ। কি আর করা। দরজা পার হলাম। অবশ্যই ধীর পদক্ষেপে। কিন্তু কিছুই ঘটল না। এবার বারান্দার সিঁড়িতে পা রাখব, এমন সময়, আচমকা পেছন থেকে তিনি জড়িয়ে ধরলেন। সুতরাং মেঝের পাট চুকিয়ে আবারো বিছানাস্থ। কারো মুখে কোন কথা নেই। সব হিন্দী সিনেমা স্টাইলে।

তারপর বিছানায় শুয়ে ভাবলাম, যাক মান ভেঙ্গেছে, এবার বলা যাক দু-একটা প্রেমালাপ। খুব ইনিয়ে বিনিয়ে শুরু করলাম। ইয়ে, মানে আমি তো চলেই যাচ্ছিলাম, ফেরালে ক্যানো? অমনি চটপট উত্তর এলো, তুমি জানো না? এই রুমেই তো বাড়ীওয়ালার মেয়েটা সুইসাইড করেছিল? তুমি কোন‌ আক্কেলে আমাকে একা এই ঘরে ফেলে যাচ্ছিলে? আমার ভয় করবে না?

এই কথা শুনে তো আমারি ভয় শুরু হয়ে গেল। না, না, সুইসাইডের জন্যে নয়। এই ঘরে আরো মিনিমাম পঁচিশ-তিরিশ বছর ৷ তাই বল্লাম, আমারো বড় ভয় করছে গো। এতক্ষনে কাজ হলো। তিনি ঘন হয়ে এলেন।

মালিবাগ
২০/০৭/৯৭
[ব্যক্তিগত নোটঃ সে রাতে আসিফ ভাই এবং জয়া আমার মালিবাগের বাসার ছিলেন।]

 

নিষিদ্ধ গতানুগতিকতা

পাঞ্জাবীটা গায়ে চড়িয়ে মামুন খুব উচু গলায় ডাকল, “চয়ন, চয়ন এই চয়ন…” হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে এল চয়ন।
: কি মামা ডাকছ কেন?
: আমার আলনার় হাত দিয়েছিস?
: না তো মামা।
: ফের মিথ্যা কথা? শয়তান এরই মধ্যে চুরি করেছিস?
স্তম্ভিত চয়ন চুপ করে থাকে। জানে কথা বললে চড় টড় খেতে হতে পারে৷
: কাল সন্ধ্যাতেই রাখলাম পঁয়ত্রিশ টাকা আর এখন আছে দশ টাকা। কোথায় রেখেছিস হারামজাদা বের কর পঁচিশ টাকা। Continue reading “নিষিদ্ধ গতানুগতিকতা”

এক ফেরী ওয়ালার জ্ঞান ফেরীর গল্প

saidabad‘সায়দাবাদ-গাজীপুর’ বাসের পেছনের দরজার পাদানিতে একটি পা, অপরটি ঝুলন্ত। দু’হাত দিয়ে সবলে হাতল আঁকড়ে ধরে ভাবছি, এটাই বুঝি জীবনের ক্লাইমেক্স অব সাকসেস্। বাস মগবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে এই ফাঁকে বাসযাত্রী সকলের ইচ্ছাই যেন এক হয়ে যায়। বুঝতে পারি সকলেই মনে মনে এই মুহূর্তে প্রার্থনারত শুধু এই কামনায় যে জ্যামটা কাটুক প্রয়োজনে ফকিরকে পয়সা পর্যন্ত দিতে রাজি। কেউ কেউ ভাবনাটাকে জ্যান্ত করে ছেড়ে দেয় আর বলে, ”সরকার এখানে একটা ফ্লাইওভার বানিয়ে দিলেই পারে” ব্যাস ছড়িয়ে পড়েছে বারুদ, ফস করে জ্বলে ওঠে আগুন। Continue reading “এক ফেরী ওয়ালার জ্ঞান ফেরীর গল্প”

আমারো বড় ভয় করছে গো !

আমার স্ত্রী বলেন আমি নাকি জানোয়ার গোত্রীয়। যেমন জানোয়ারেরা মাটির দিকে বুক দিয়ে ঘুমায়, তেমনি আমিও মাটির দিকে বুক দিয়ে (মানে উপুড় হয়ে) ঘুমাই। আর তাই তিনি মনে করেন, তাঁর দাম্পত্য জীবন আমি বিষিয়ে তুলছি, একজন জানোয়ার হবার সুবাদে। অথচ, আমাদের প্রেমের বিয়ে। আর আমি কিনা ওকে এত ভালবাসি !
Continue reading “আমারো বড় ভয় করছে গো !”