আমাদের আঙিনার ঘ্রাণ

আঙিনার পূর্ব পার্শ্বে ছিল একটা গন্ধরাজ ফুলের গাছ। ভোরবেলাটা ছিল গন্ধরাজের সুবাস ছড়ানো। খুব সকালে গোয়াল ঘর থেকে গরু মহিষ বের করে বাইরে খুলিতে নেওয়ার সময় আঙিনায় গোবর পড়ত। এরপর পরই আঙিনা ঝাড়ু দেওয়া শুরু হতো। এক দেড় হাজার স্কয়ার ফিটের আঙিনা। ঝাড়ু দেওয়ার আগে ধূলা যেন মরে এই উদ্দেশ্যে পানি ছিটানো হতো।আঙিনার দক্ষিন পশ্চিমে ছিল ইয়া বড় বাতাবি লেবুর গাছ, আমরা বলতাম বাদামি। ফুল আসলে বাতাবি লেবুর ঘ্রাণ ভেসে বেড়াত। আর ছিল বাড়ীর পূর্ব দেয়াল ঘেঁষে উত্তর পূর্বে একটি নীম গাছ আর পূর্ব দেয়ালের মাঝামাঝি একটি কাঁঠাল গাছ। এই কাঁঠাল গাছটির কাঁঠাল ছিল সর্বজনপ্রিয়। সারা বছর জুড়ে কখনো গন্ধরাজ, কখনো নীম, কখনো বাতাবি লেবু আর কখনো কাঁঠালের ঘ্রানে ভরে থাকত আমাদের আঙিনা। উত্তর পশ্চিমের গোপালভোগ আম গাছটারও একটা ঘ্রাণ আলাদা করে চেনা যেত, তবে সেটা অল্প ক’দিন মাত্র। আরো পরে দক্ষিন দেয়ালের বাইরে আব্বা (ফসিউর রহমান) হরিতকী গাছ লাগালে পরে হরিতকীর ঘ্রাণও এসে ঢুকে পড়ে আমাদের আঙিনায়। আপা’রা চালের আটা থেকে বিভিন্ন রকম তেলে ভাজা খাবার বানাতেন, আমরা বলতাম, ঝুড়ি। সেগুলো শুকোতে দেওয়া হতো। আমের মিষ্টি আচারের জন্য ছোটমা (রেহানা খাতুন) ছিলেন প্রসিদ্ধ। টক মিষ্টি দুই প্রকারের আমের আচারের আর বরই (আমরা বলতাম কুল) এর আচারের বয়াম থরে থরে সাজিয়ে রোদে দেওয়া হতো। আঙিনায় অনেকগুলো জি আই তার বাঁধা ছিল কাপড় শুকানোর জন্য। সেইসব তারে ঝুলে থাকা ধোয়া কাপড় থেকে আসত সাবান-পানি কিংবা ক্ষারের ঘ্রাণ আর থাকত সাদা কাপড়গুলোতে মাড়ের গন্ধ। কেন জানি নতুন গামছার গন্ধটা আমার বেশ ভালো লাগত। আঙিনার এক মাথা থেকে অপর মাথায় দৌড় দিতে গিয়ে শুকোতে দেওয়া কাপড়ে জড়িয়ে গিয়ে কতবার যে ধপাস হয়েছি তার ঠিক নেই। সেই সাথে আচারের বয়াম ভাঙার রেকর্ডটাও বোধহয় আমারই।

মাটির দেয়াল লেপার পর দুই তিনদিন মাটির গন্ধ ঝুলে থাকতো। শীতকালে ধান উষা শুকা করা হলে তার গন্ধটা ছিল একদম বেখাপ্পা। তবে ঢেঁকি তে যখন ভাপা পিঠা (আমরা বলতাম ভাক্কা পিঠা)’র জন্য চাল থেকে আটা তৈরী করা হতো তখন চমৎকার একটা শীতকাল শীতকাল ঘ্রান হতো।

তবে সেই গন্ধরাজের ঘ্রাণ এখনো আমার নাকে লেগে আছে। আচ্ছা এই গন্ধরাজের গাছটা কে লাগিয়েছিল? ছোট মা নিশ্চয়?

Author: ANM Farukh

I am an Analyst.

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.