আমাদের আঙিনার ঘ্রাণ

আঙিনার পূর্ব পার্শ্বে ছিল একটা গন্ধরাজ ফুলের গাছ। ভোরবেলাটা ছিল গন্ধরাজের সুবাস ছড়ানো। খুব সকালে গোয়াল ঘর থেকে গরু মহিষ বের করে বাইরে খুলিতে নেওয়ার সময় আঙিনায় গোবর পড়ত। এরপর পরই আঙিনা ঝাড়ু দেওয়া শুরু হতো। এক দেড় হাজার স্কয়ার ফিটের আঙিনা। ঝাড়ু দেওয়ার আগে ধূলা যেন মরে এই উদ্দেশ্যে পানি ছিটানো হতো। Continue reading “আমাদের আঙিনার ঘ্রাণ”

রাবেয়া খালা – প্রথম মৃত্যুর ঘ্রাণ

বড়মার নাম ছিল সাইদা বেগম। তাঁর বোন ছিলেন রাবেয়া খালা। তখন 1978 বা 1979 সাল হবে। আমার মা’র সাথে নিউটাউন আর ঈদগাহবস্তির মাঝামাঝি একটা ক্লিনিকে অনেকবার গিয়েছি, এমনটা মনে পড়ে। ঐখানে তখন দেলোয়ার ডাক্তার (ডক্টর দেলোয়ার হোসেন, জেনারেল সার্জারি) ক্লিনিক খুলেছিলেন। ঐ ক্লিনিকে রাবেয়া খালা ভর্ত্তি ছিলেন। আম্মা প্রায় প্রতিবারই আমাকে নিয়ে যেতেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা রাবেয়া খালা আমাদেরকে দেখলে খুব খুশী হতেন। Continue reading “রাবেয়া খালা – প্রথম মৃত্যুর ঘ্রাণ”

খেলনার নাম পাওয়ার হাউজ

যেখানেই যাও মাগরিবের আযানের আগে বাড়ীতে ফিরতে হবে। এটা ছিল শিশুদের জন্য সান্ধ্য আইন। খেলার মাঠ থেকে ঘরে ফিরে প্রথম কাজ ছিল হাত মুখ ধোয়া। আর যারা একটু বড় তারা বায়োজিদ হারিকেন মুছতে বসতে হতো, কাজের লোক না থাকলে। হারিকেন মুছে তাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালাতে বাড়ীতে সন্ধ্যা নামতো। মাটিতে পাটি (আমরা বলতাম শপ) বিছিয়ে পড়তে বসে মশা, আলোর পোকা, সবুজ ঘাস ফড়িং আর একটু দূরের জোনাকি পোকারা সাক্ষী আমি চিৎকার করে পড়তাম ঠিকই তবে নজর থাকত ঐ পোকা মাকড়ের দিকেই বেশী। Continue reading “খেলনার নাম পাওয়ার হাউজ”

ডানপিটে দিনগুলি

আকস্মিক এবং চমকপ্রদ। ঘটনাটি যখন ঘটতে শুরু করল তার ইমিডিয়েট আগে কোথায় ছিলাম আর কিভাবে আমি এই ঘটনার মুখোমুখি হলাম কিংবা চারদিকের আবছা আলোয় মোড়া এই ঘটনাটি ঠিক কিভাবে আমার সামনে উদয় হলো, ঘটনার আকস্মিকতায় স্মৃতি একদম ফকফকা। খেয়াল করে দেখলাম চোখের সামনে যা ঘটছে তা হলো একটি পাঁচটণী ট্রাকের পেছনে ঝুলে আছি আর উপর থেকে শক্ত দুটি হাত আমাকে ধরে টেনে তুলছে। আর আমার পা গুলো শূণ্যে ঝুলছে। ভয়ে আতঙ্কে মুখ থেকে আমার বেরিয়ে এল তীক্ষ্ণ চিৎকার। উপরে তাকাতে চোখে পড়ল সন্ধ্যার আকাশের গায়ে দুটো মাথা। এসময় ট্রাকের গতি বেড়ে যাওয়া শুরু করল। মাথাটা হঠাৎ পরিষ্কার হয়ে গেল। ওরা আমাকে টেনে ট্রাকে পূরোপুরি তুলে ফেলতে না ফেলতেই বুঝে ফেললাম আমাকে ছেলেধরা ধরেছে। Continue reading “ডানপিটে দিনগুলি”

অভিনয় অনুভবে

মামা – খালারা ধারনাই করতে পারেননি, ছোটখাট এসব কমপ্লেইন করলে আমার লেখাপড়া-ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ভেবেছিলেন, “আমাদের কথা তো শোন না, বাছা। এবার বুঝবে, শাসন কাকে বলে।” আর তাদের ধারনা ছিল, আমাকে হয়ত বেশ কড়া শাসন করা হবে। কিন্তু তার বদলে একেবারে লেখাপড়া থেকেই অবসর! তাও চতুর্থ শ্রেণীতে।

তারিখ বৃহঃ, ২১/০৬/২০১২

থাকি দিনাজপুর সদরে। চতুর্থ শ্রেনী। দিনাজপুর জিলা স্কুলের ছাত্র। থাকতে হত মানাবাড়িতে। সেসময় এমন একটি স্কুলে পড়তাম যা ছিল আমার মতো মফঃম্বল থেকে উঠে আসা একজন ছেলের জন্য সেরা কৃতিত্ব । স্কুলে ক্লাশ শুরুর কয়েক মাস পর, গ্রাম থেকে আব্বা এসেছেন আমাকে দেখতে। সে বয়সে তখনো আব্বার স্নেহ বৃঝিনি, “আব্বা” বলতে বুঝতাম প্রচন্ড রাগী একজন মানুষ। কাজেই “আব্বা দেখতে এসেছেন” অর্থ হলো “পরিদর্শনে” এসেছেন। নাঈম মামা আমাকে খেলার মাঠ থেকে ধরে আমলেন। বর্ষার নতুন বৃষ্টিতে জমে উঠা কাদা-ফুটবল ছেড়ে আসতে হল বলে মনে কিছু আফসোস আর পায়ে কিছু কাদা তখনো লেগেছিল। Continue reading “অভিনয় অনুভবে”